
স্টাফ রিপোর্টার ।
রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় শুরুতে ধুলিঝড় পরবর্তিতে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টি হয়েছে। কয়েকদিন থেকে চলা তাপদাহের মাঝে হঠাৎ রাতে ঝড় বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে নগরবাসী। তবে তার আগে হঠাৎ ধুলা ঝড়ের কারণে অস্বস্তিতে পড়ে নগরবাসী।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর নগরীসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়, শিলা বৃষ্টি হয়। কয়েক মিনিটের কালবৈশাখী ঝোড়ো হাওয়ায় ও শিলাবৃষ্টিতে ঘরবাড়ির পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত রংপুর ,লালমনিরহাট,কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার অনেক স্থানে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে । এ কয়েকটি জেলায় ঝড়ে গাছ পড়ে আহত হয়েছে ১১জন । এছাড়া বজ্রপাতে আহত হয়েছে আরো ১০জন ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঝড়ের সময় গতিবেগ ছিল ১০-১২ নটিক্যাল মাইল। স্থান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ছিল গতিবেগ। তবে স্থায়ীত্ব কম থাকায় সর্বোচ্চ উঠেই আবার কমে যায় সঙ্গে সঙ্গে। আজকে আকাশে কালো মেঘ থাকলেও রোদ উঠেছে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়া অফিস থেকে।
এদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, ঝড় বৃষ্টি হলে স্বাভাবিকভাবেই ফসলের ক্ষতি হয়। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরুপণ করা যায়নি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ চলছে।
লালমনিরহাটে কালবৈশাখী ঝড়ে উড়ে গেছে কয়েকশ ঘরবাড়ি ও গাছপালা। জেলার পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ঝোড়ো হাওয়ায় ঘরবাড়ির পাশাপাশি ফসলেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ সময় বজ্রপাতে ৭ জন শ্রমিক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে । ওই ঝড়ের সময় বজ্রপাতে ৭ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন হাতীবান্ধা উপজেলা স্বা¯’্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। বজ্রপাতে আহতরা রাতে কাজ শেষে বাড়িতে ফিরছিলেন । এসময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলে তারা আহত হন বলে জানান ওসি মাহমুদুন্নবী ।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত পৌনে ১১ টার দিকে জেলার সদর, আদীতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ঝড়ের তাণ্ডব চলে। ৩০ মিনিট চলে ঝোড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টি।
কালবৈশাখী ঝড়ে শত শত বসতবাড়ি ও সরকারি – বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লন্ডভন্ড সহ প্রায় হাজার বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলে ধারণা করা হ”েছ কয়েক কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
জানা যায়, এ কালবৈশাখী ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায়। ওই উপজেলার সিন্দুর্ণা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের শতাধিক বসতবাড়ি ঝড়ে ভেঙে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া তিস্তা তীরবর্তী ওইসব এলাকার উঠতি হাজার হাজার বিঘা জমির ভুট্টা ও ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঠিক বন্ধের সময় হঠাৎ ধুলা ঝড় শুরু হয়। এসময় অস্বস্তিতে পরে নগরবাসী। কিছুক্ষণ ধুলাঝড় চলার পর শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড় আর বজ্রপাত। সেই সঙ্গে বৃষ্টি। কালবৈশাখী ঝড়ে নগরীর অনেক জায়গায় গাছপালা উপড়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও ঘরের টিনের চাল উড়ে যায়। এসময় পুরো নগরী লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে। তবে কয়েকদিন ধরে দাবদাহের প্রভাবে হাঁপিয়ে ওঠা রংপুর নগরীতে ফিরেছে প্রশান্তি। সেই সঙ্গে বৃষ্টিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন নগরবাসী। কালবৈশাখী এই ঝড়বৃষ্টি চলতি মৌসুমে এই প্রথম।
অন্যদিকে, রংপুর জেলার তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, ও পীরগাছা উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়ায় ঘরবাড়ির পাশাপাশি ফসলেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ঝোড়ো বাতাসে আম, লিচু, ভুট্টা, ধান, পাটসহ উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের স্থায়িত্ব কম হলেও কোথাও কোথাও বাতাসের বেগের কারণে ঘরবাড়ি ও গাছ-গাছালির ক্ষতির পাশাপাশি উড়ে গেছে স্থাপনা।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রাতের ঝড়বৃষ্টির সময় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ মিলিমিটার। তবে বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ নটিক্যাল মাইল। স্থানভেদে কোথাও কোথাও ১০-১২ নটিক্যাল মাইল ছিলো।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, কালবৈশাখীর ঝড়ে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেগুলো নিরুপণ করা হচ্ছে।
Leave a Reply